Saturday, November 2, 2019

বে-খেয়ালি চিঠি

১৮'ই আশ্বিন ১৪২৬
অ'প্রিয়, 

মনের মাঝে গেঁথে থাকা ধুতরা ফুলের শুভেচ্ছা গ্রহণ করো।  গোলাপের শুভেচ্ছা প্রেরণ করে,  গোলাপের পবিত্রতা হরনের দায় ভার গ্রহণ করতে পারবো না বিধায়, সে শুভেচ্ছা হতে তুমি বঞ্চিত।  যদিও জানি অনেকে তোমার বায্যিক রূপের মোহে তোমাকে কত উপমা'তে সাজাতে চাই!  তারা যদি সত্যিকার তুমি কে জানতো, তবে হয়তো। 
 থাক সে সব কথা,  আজ কয়দিন হলো বৃষ্টি হচ্ছে।  অথচ শরৎ কালে এই ভাবে বৃষ্টি হবার কথা ছিলো না।  শরৎ ' র চোখের জলে নিজেকে ভিজিয়ে তোমাকে লিখতে বসা।  অভিযোগের ডায়েরি থেকে। 

শরৎ'র আকাশ'টা এখন ঘন ঘন কাঁদতে বসে,  খুব যত্ন করে, সুর করে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে।  বায়না ধরে, না পাওয়ার যন্তনা নিয়ে, যেভাবে আমার ছোট্ট মেয়েটি কাঁদে দীর্ঘ সময় অব্ধি। 
   অথচ শরৎ আকাশের,  এই ভাবে কাঁদার কোন প্রশ্নই আসে না! 
প্রকৃতি পরম মমতায় শরৎ কে উজাড় করে সৌন্দর্য দিয়েছে। 
 " দু-চালা কুঁড়ে ঘরের  ঘর দেখেছো কখনো"
একবার আমাদের গ্রামের থেকে বেশ দূরে এক গ্রামে,  মায়ের নিকট বর্তী এক আত্মীয় ' র মৃত্যু লাশ দেখতে গেছিলাম। লাশ বলতে মনে পড়ে গেলো স্বজন হারা "মানুষের আর্তনাদ "।  আমি মানুষের আর্তনাদকে সহ্য করতে পারি না, বুকের মাঝে পাথর সম ব্যথা অনুভূতি হয়।  তাই মৃত্য মানুষের লাশ দেখতে যাই না। তো' সে দিন মা' খালাদের স্বজনহারা আর্তনাদ আমি সহ্য না করতে পেরে, ছুটতে ছুটতে বহু দূর চলে গেছিলাম।  চোখের সামনে এক দু-চালা মাটি ও খড়ের বাড়ি দেখলাম।  অন্য কোন একদিন সে বাড়ি নিয়ে লিখবো।  আজ আর সেদিকে না যাই, শুধু সেদিনের সে রূপ প্রকাশ করতে হলে আমার আজ রাত শেষ হবে।  এতো টুকু'ই বলবো,  গ্রামের এক জন কৃষকের বাড়ি ফুল গাছের বাগান আর নৈপূনতার যেমন কোন কমতি থাকে না।  যতটা সুন্দর তোমাদের শহরের মানুষের কল্পনাতীত ততটা সুন্দর করে,  প্রকৃতি প্রলেপ লেপ্টে দেয় শরৎ এর রূপে। 
   তবু ও দেখো স্বজন হারা হয়ে আর্তনাদে দুক'ড়ে দুক'ড়ে কাঁদছে।  কি'যে তার শূন্য,  কি'তার বিষন্নতা  কেউ জানতে'ও চাই না।  সকলে শরৎ এর রূপ দেখে,  কাশফুলের ছোঁয়া পেতে উম্মূখ হয়ে ওঠে। 

  অথচ,  শরৎ এর আকাশ কে কেউ কোন দিন প্রশ্ন করে না,  কি ব্যথার বেদনে সে বিভোর?  

আমার খুব জানতে ইচ্ছে হয়,  আমার মত'ই আকাশের কোন প্রতারক তুমি ছিলো কি'না?  

    যাই হোক তুমি কেমন আছো? নিজের স্বার্থের জন্য যে সব উজাড় করে বিলিয়ে দিতে জানে,  তার তো আর খারাপ থাকার প্রশ্ন' ই আসে না।  তুমি নিশ্চয় ভালো আছো? 
কি ভাবছো?  তুমি ভালো থাকো এটাই আমি চাই! 
প্রশ্ন'ই আসে না!  আমি অত'টা উদার নাই।  
যে আমাকের গ্রীষ্মের দাবানলে দহন করবে,  তার আকাশে বর্ষার মেঘ হয়ে বর্ষিত হব!  বরং চৈত্রের কঠিন রবিরাজের অগ্নিপথে বাতাস হয়ে প্রবেশ করবো।  যেমন টা কামাড় লোহা কে কয়লা'র উপর রেখে অক্সিজেনের অবাদ প্রবেশের জন্য আগুনকে জ্বালতে সারাদিন শ্রম দেয়। 
আজ অনেক অভিমান অভিযোগ মনের অভ্যন্তরে ধাক্কা দিচ্ছে,  কলমে আর কাগজে অশ্রু হয়ে জমা হচ্ছে।  গত চারটি বছর কখনো ভুল হয়'নি, কিংবা শত প্রচেষ্টা করে ও তুমি আটকে রাখতে পাড়নি আমাকে সর্ব প্রথম অভিনন্দন জানতে তোমার জম্মদিনের।  
  অথচ এই প্রথম তোমার জম্মদিন আসছে, (আগামী কার্তিকে)  অথচ আমার কোন পরিকল্পনা নেই।  
অবশ্য তুমি আমার কোন কিছু'তে নেই।  আছো অভিযোগ আর অভিশাপের খাতাতে।  তোমার প্রতি আমার অভিযোগ গুলো মিথ্যা ছিলো না কখনো,  নিজেকে পরিবর্তের চেয়ে নিজেকে বিলিয়ে দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছো।  এখনো তাই করছো৷  
তোমাকে লিখতে চাইলে যেনো লিখে যেতেই ইচ্ছে হয়।  যদি ' ও জানি তুমিবকোন দিন পড়বে না।  আর ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে কখনো কোন ভাজ হয়ে থাকা পৃষ্ঠা 'ই পেয়ে যাও।  নাম পরিচয় হীন চিঠি,  তবে সে'দিন ও তোমার বুঝতে  ভুল হবে না এই চিঠি র মালিক যে তুমি'ই,  এক কথা মনে করতে।  
 কারন বিশ্বের একমাত্র আমি' ই যে কিনা, তার প্রিয় মানুষের আঁখি পাতে শরৎ'র আকাশের ন্যায় অবিরাম জলধারা বয়ে যেতে দেখতে চাই।  আমি জানি সেদিন এই চিঠি পড়ে তুমি বিরক্ত বোধ করবে।  তার চেয়ে বেশি বিরক্ত বোধ করবে ' জ্যোৎস্নার আড়ালে যে বিষ ধারণ করে চাঁদ' শিরোনামের গল্প পড়লে।  তোমার চরিত্র গুলো বাস্তব তুমির সাথে মিলিয়ে পাঠক সমাজে যতটুকু নোংরামি প্রকাশ সম্ভাব ততটুকু প্রকাশ করবো।  হয়তো সম্পূর্ণ তোমাকে প্রকাশ করলে পাঠক সমাজে আমাকে চটি লিখক নামে আখ্যায়িত করা হতে পারে।  কিংবা অশ্লীল বই লিখার অপরাধে জেল জরিমানা হতে পারে।  সে ভয়ে তোমাকে প্রকাশ করতে পারেনি।  যদি প্রকাশ করা সম্ভাব হতো, তবে তোমাকে জম্ম দেওয়ার অপরাধ বোধে এই পৃথিবী, অন্য কোন গ্রহের সাথে স্বংঘর্ষিত হয়ে ধ্বংস  হবার চেষ্টা করতো। নিজের সম্পর্কে এতো নষ্ট সত্য কেউ সহ্য করতে পারবে না কোন দিন।  এমন 'কি তুমিও না। 
যতই লিখবো না ভাবতেছি তত'ই,  তোমাকে নিজের মাঝে আবিষ্কার করছি।  তাই ইচ্ছের বুকে মাটি চাপা দিয়ে শেষ করছি। 

 ভালো থাকার প্রর্থনা তোমাকে অনেকে করে, আমি করবো না। তুমি বরং কয়লা'র অগ্নিতাপে লোহা'র মত অগ্নিদগ্ধ হ'ও প্রতিনিয়ত। 

                                             ইতি
                                   তোমার অভিশাপ

ছবিঃ গুগল

No comments:

Post a Comment