Monday, November 4, 2019

এলোমেলো চিন্তা ও একটি আত্মার স্বপ্ন

এক আত্মার কল্পনা 

সূর্য অজানাতে ডুব দেওয়ার পর যেমন, প্রকৃতি রক্তিম মেঘে আলোকিত করতে চেয়ে ব্যার্থ হওয়ার পর, রাতের অন্ধকারের চাদরে ঢেকে যায়। তেমনি আমার চারিপাশ অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে।  পায়ের নিচ হতে ক্রমশ, যন্ত্রণা টা খুব ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠছে।  ঝাপসা হয়ে উঠচ্ছে আমার চারপাশ,  কান্না আর প্রার্থনা ভেসে আসছে। আতর  সুগন্ধি র তীব্র ঘ্রাণ, অথচ এক সময় এতো তীব্র সুগন্ধি ব্যবহার করে, আমার পাশে আসতো না।  শরীর টা খুব ব্যথা,  কেউ ছুঁয়ে দিলে চিৎকার করতে ইচ্ছে হচ্ছে।  বয়স হয়েছে  লোক লজ্জার ভয়ে চিৎকার করতে পাড়ছি না।  
  ভীষণ পিপাসা পেয়েছে,  কলিজা 'টা যেন শত শত বছর জলের সংস্পর্শে আসে নি।  সবাই ব্যস্ত!  আমাকে এক গ্লাস পানি দিয়ে সাহায্য করার মত কেউ এখানে নেই।  অথচ এরা'ই নাকি আমার আপন!  
 কি ভয়ংকর এক স্বপ্ন দেখলাম মাত্র,  চোখের সামনে থেকে কোন মতে দৃশ্য টা দূরে সরে যাচ্ছে না। 

 হঠাৎ বাড়িতে এতো মানুষের আনাগোনা, সবার মুখে আমার নাম।  এক টু অবাক হলাম, এরা কি পাগল হয়ে গেছে?  হাসি পাচ্ছিল, তাদের কর্মকান্ড দেখে৷ 
 কিন্তু শত চেষ্টা করেও হাসতে পারেনি,  খুব ব্যথা শরীরে।  প্রতিটি শিরা উপশিরাতে। একটু উষ্ণ পানিতে গোসল দিতে পারলে,  হয়তো ভালো লাগতো।  এ 'কি এ যে মেঘ না চাইতে বৃষ্টি!  
 কয়য়েক জন কে দেখলাম উষ্ণ পানি নিয়ে আসছে এই দিকে।  
 আমি ক্লান্ত জেনে হয়তো,  অবাক হলাম তখন, যখন আমার শরীরে মানুষ গুলো উষ্ণ পানি ঢেলেছে।  অথচ আমার ক্লান্তি দূর হচ্ছে না।  আমার ক্লান্তি যেনো বেড়েই চলেছে।  আর মানুষ গুলো খুব যত্ন করে যখন আমার শরীরে হাত দিচ্ছে,  যেন পাখির পালকের ছোঁয়া, তবুও তীব্র ব্যথায় কাতর হয়ে আমি চিৎকার করছি!  কেউ যেন কর্ণপাত করছে না।  আতর আর কপূরে ছেয়ে গেছে আমার আদরে বেড়ে ওঠা শরীর।  এর পর আমি আর ও বিমোহিত যখন দেখি আমার প্রিয় জনেরা আমাকে কাঁধে করে কোথায় যেনো নিয়ে যাচ্ছে!  আমার প্রিয় ঘর বাড়ি তিল তিল করে জমিয়ে রাখা স্মৃতি!  আমার ঘরে আমার প্রবেশ নিষেধ করা হচ্ছে।  
 অন্ধকার মাটির নিচে আমার দেহ কে রেখে সকলে চলে যাচ্ছে,  অথচ একদিন ও বাড়ির বাহিরে রাত বেশি হলে এরা চিন্তিত হতো।  আজ অনায়াসে রেখে চলে যাচ্ছে মানুষ গুলো।  আমি কি করে যাই, আমার শরীর রেখে? যে শরীরে বাসা বেধে কাটিয়েছি এতো গুলো বছর।  সে শরীর রেখে চলে যাবো কি করে।  আমি র'য়ে যাই অন্ধকার কবরে।  আলো উঠলে ফিরে যাবো। 
 আলো তো আর উঠলো না!  সূর্য এর দেখাও মিলল না।  আজ অনেক দিন হয়ে গেছে কেউ দেখতে এলোনা। 
 এখন আর শরীরের মায়া নেই,  মাটিতে বিলিন হয়ে গেছে।  অন্ধকারে যত্ন করার সময় হয়নি।  ছোট্ট জীবনের ভুল ভ্রান্তি হিসাবে খুব ব্যস্ত ছিলাম।  ইশ্বর দূত প্রেরণ করেছে।  এক দিনের ছুটি মিলেছে।  তাই নিজের ঘর বাড়ি আর প্রিয় জন দের দেখতে এসেছি।  সবাই দেখলাম দিব্যি আছে,  আমি নেই আমার ঘর টা আজ দখল,  বেশ পরিপাটি,  অথচ এলো মেলো আর অগোছালো থাকতো এই ঘর 'টি এক সময়।  দরজা টা দেখি তালা দেওয়া।  চাবি টা যে কোথায় রেখেছি?  ফিরে যাচ্ছি,  চাবি খুজতে।  সবার সাথে দেখা করলাম কুশল জানতে চেয়ে প্রতি উত্তর পেলাম না।  কেউ আমার কথার জবাব দিলো না।  সম্ভাবত তারা ভাবছে আমি ঘরে চাবি চাইবো!  
 এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে কথা,  ওই দিকে বাঁশি তে ফুঁ দিচ্ছে দূত।  ফিরে যেতে হবে সেই অন্ধকার নিবাসে।  
 সে দিন যাকে খারাপ স্বপ্ন ভেবেছিলাম সে যে আমার স্বপ্ন ছিলো না।  ছিলো আলোকিত পৃথিবী হতে শেষ সময়।




ছবিঃ গুগল 

No comments:

Post a Comment