Thursday, December 5, 2019

কবিতা

আমি তখন রাজা হবো

হে সভ্য সমাজ, 
আমি ও একদিন, বৃদ্ধ অঙ্গুলি উচিয়ে বলব-
তোমরা বড় অসভ্য। 

হে আধুনিক সমাজ, 
আমিও একদিন, তোমাদের ডেকে বলবো -
উঁহু কি অ আধুনিক তুমি! 
 শতাব্দীর বস্তা পঁচা রুচি তোমার। 

হে উচ্চ শিক্ষিত মানব,
আমিও একদিন বলে বসব তোমাকে -
আরে!  তোমার মাথা ভর্তি গোবর, কি জানো তুমি?

ওহে ও দেশ প্রেমিক, 
জেনে নাও, এই দেশ টা বিক্রি করে দিয়ে এসে।
ভারাক্রান্ত কন্ঠে, দু-ফোটা অশ্রু বিসর্জন দিয়ে 
আমি ও ভাষণ দিবো! 
দেশের জন্য, আমার হৃদয় ব্যকুল। 

আমার থলি ভর্তি স্বার্থপরতা
আর জণগণের বিশ্বাস।
 খুব যুদ্ধ বেঁধেছে।।

থলি উচিয়ে আমি, 
মানুষকে  সংবিধানের বাণী শুনাবো। 

আমি তখন রাজা হবো,  
ভীষণ জেদি হবো,  
মুখে মুখে ঠুঁসি এটে দিবো। 

শুধু আমি কথা বলবো।  
সবাই শুনবে, আর হাত তালি দিবে। 

মানুষ গুলো শুধু ছুটবে আর ছুটবে 
এক কোটি, পাগলা ঘোড়া 
এক কোটি, পাগলা কুকুর, আর
এক কোটি,  হিংস্র হায়না । 

লেলিয়ে দিবো;
 রাতের অন্ধকারে উঠিয়ে আনবো।

ভোরে র প্রথম আলোতে,
 তোমাদের রাজ পথ 
রক্তের লাল বর্ণে কেঁপে উঠবে। 
চা'য়ের কাঁপে কিছু সময় প্রবল ঝড় -

সন্ধ্যা আসতেই, 
আমার পাঠিয়ে দেওয়া জানোয়ার গুলো ক্ষিপ্ত হবে  

চা'য়ের চুমুকে আমাকে,প্রশ্ন বিদ্ধ করেছিলে কারা? 
তোমাদের রক্তে ই সে প্রশ্নের উত্তর রচিত হবে। 

সব হৈ চৈ থেমে যাবে,  
শুধু আমার অত্যাচার ক্রমশ বেড়ে যাবে! 

তোমরা শুধু ইশ্বরের কাছে বিচার চাইবে, 
অথচ 
ইশ্বর কখনো  স্বর্গ থেকে এসে, তোমাদের পক্ষে
আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে না। 

তবুও তোমরা চুপ থাকবে! 

আর আমি বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করে, 
ধ্বংস যজ্ঞ সৃষ্টি করবো। 
আমার রাজ্যে আমি,
 ইশ্বরের আরাধনা বন্ধ করবো।

ইশ্বরের সংবিধানে আমার কোন স্বার্থ নেই। 
আমার স্বার্থে আমি সংবিধান লিখে নিবো।।  

"নাসিদ "

Thursday, November 28, 2019

আমার আমাকে যদি জানতে চাও

" আমি কেনো ভিন্ন! 
 তোমাদের চিরচেনা সমাজের কাছে?  "





ঘটনা 'এক' 

বকুল ফুলের মালা হাতে ১২ বছরে এক বালক ছুটছে।
  মালা নিবেন, ভাইয়া মালা নেন একটা, আপু মালা নেন একটা। 

  পকেটে হাত দিয়ে দেখি আড্ডা শেষে দশ টাকা অবশিষ্ট। কিন্তু ফুলের মালা আমাকে নিতেই হবে।  
কখনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব হয় না,  যে সকালে কর্মস্থানে ফিরতে এই টাকা আমার লাগবে।  ওই সময় ওই বালক টির হাসি আমাকে ভুলিয়ে দেয়, আমার আগামীদিনের চিন্তা। ওর চোখে দেখি বিশ্বাস! 
ও বিশ্বাস করে  সৃষ্টি কর্তা ওই ফুলের মাঝে তার রিযিক লিখেছেন। আমি এই বিশ্বাসকে সম্মান করি, উপভোগ করি। 
দশ টাকার যে কয়টা মালা হয় কিনে নিই।  চাইলে দশ টাকা ওকে এমনি দিয়ে দিতে পারতাম।  কিন্তু দেইনি! 
  কারন ও যেন ওর কর্মের সম্মানের মূল্য পাই। ওর বিশ্বাস যেন নষ্ট না হয়। যে ফুলের মালার মাঝে,  রিযিক দাতা ওর রিযিক রেখেছেন। তাকে দশ টাকা এমনিতে দিয়ে, তার বিশ্বাস ভঙ্গের কারন হতে চাইনি।  আমি ওর চোখে সৃষ্টিকর্তার প্রতি যে বিশ্বাস দেখেছি,  যে পূর্নতা দেখেছি। তাতে করে  আমার  আর এক জনমে ফুল বিক্রেতা হয়ে জম্ম নিতে ইচ্ছে  হয়। 

ঘটনা' দুই'
 
আজ যখন আজমীর শরিফের ফিতা দেখলাম,( লালুশালু) হলুদ লাল ফিতা,  এক সাধু নিয়ে বসে আছে।  আমি যেয়ে জানতে চাইলাম, দাম কত? 
সাধুঃ আপনার যা ইচ্ছে হয় 
আমি কথা বলে হাত এগিয়ে দিই।  যদিও আমার এই লালুশালু ফিতাতে বিশ্বাস নেই।  এবং বিশ্বাস নেই ওই ব্যাক্তির (সাধু) বিশ্বাসের  প্রতি বিশ্বাস।  আমার বিশ্বাস আছে ওর মুখের হাসির প্রতি।  ও হয়তো বিশ্বাস করেই নিয়েছে,  পীরের অছিলতে আল্লাহ তার রিযিকের ব্যবস্থা করেছে।  এই বিশ্বাস নিয়ে সে যে পরম তৃপ্তি নিয়ে হাসে। সে হাসির বর্ণনা হয়তো রবি ঠাকুর,  কিংবা শরৎবাবু দিতে পারবেন। আমি অতি নগণ্য এবং আদিম   { সভ্যতার পরিবর্তনের হাওয়া গায়ে মেখে চলে  আর  শেষ হয়ে গেলো সব শেষ হয়ে গেলো বলে চিৎকার করতে থাকা গুলো আমার দিকে তাকিয়ে হাসে  । }
{[(   ওই দিকে সংস্কৃতি নামের অপসংস্কৃতি আমাদের বাঙালি শিকড় কে উবু করে *** দিয়ে যাচ্ছে   )]}
এই দিকে আমি চেয়ে থাকি ওই সাধুর চোখের দিকে।  মানুষের ভিতর কে জানতে হলে সরাসরি তার চোখের দিকে তাকান।  সে সত্য বলছে না মিথ্যা বলছে?  মানুষের চোখ মিথ্যা বলেনা।  আমি তার বিশ্বাসকে সম্মান করি এবং উপভোগ করি।  তাই আমি সাধুদের কাছ থেকে ফিতা কিংবা বালা নিয়ে হাতে পড়ি। এতে আধুনিক সভ্যতার মানুষ কি  মনোভাব প্রকাশ করে তাতে আমার কোন মাথাব্যথা নেই।  

এ ধরণের অসংখ্য বিশ্বাসের ঘটনা, যা আমি উপভোগ করি।  
অথচ,
তোমরা হয় সে নিয়ম মেনে নাও, আর না হয় উপেক্ষা করো।  

কিন্তু,আমি
 আমার মতো ছুটে চলি। যারা এই সমাজের হাতে জিম্মি না, কিংবা সমাজের নিয়মের নির্মম চাবুকের আঘাতে পৃষ্ট তাদের বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমি উপভোগ করি।  কখনো কখনো শয়াতানের হাত ধরে নরকে আবার কখনো কখনো ইশ্বরের প্রেরিত দূতের হাত ধরে স্বর্গে করি বিচরণ।  তবে আমি না ইশ্বরের নামে মিথ্যা বলি, আর না আমি শয়তান কে লেলিয়ে দিই মানুষের প্রতি।  আমি আমার মতো মানুষের বিশ্বাস কে উপভোগ করি।

ছবি গুগলথেকে নেওয়া।  
ঘটনা জীবন থেকে নেওয়া। 

Monday, November 18, 2019

কবিতা

বিষাদের প্রার্থনা




চলে তো যাচ্ছে, চলে যাক যে ভাবে গ্রীষ্ম আসে,
তারপর ভীষণ উত্তাপে খরাতে জ্বালিয়ে!
দগ্ধ করে ধরণী রানী কে - ফিরে যাবে সে।

দুই চোখে জল নিয়ে নেমে আসবে বর্ষা,
সে কি অশ্রুপাত! যেন প্রিয় হারা কান্না।
ভালোবাসার প্রবল স্রোতে ভাসিয়ে,
ভিজিয়ে দিয়ে সবুজ অরণ্য, সেও চলে যায়!

মাথার উপর বিশাল শূন্যতা নিয়ে, নীল শাড়ী পড়ে
মেঘের পরতে পরতে, কাশ ফুলে'র কমলতা নিয়ে
আসে, মেঘ কন্যা আকাশ রাণী শরৎ ।
কাশ ফুলের কোমল কেশর বিছিয়ে -
ধরিত্রী মাতা তাকে গ্রহণ করে।
মেঘ রাণী সেও ফিরে যাবে,
যেভাবে গ্রীষ্ম, বর্ষা সময়ের স্রোতে হারিয়েছে।

হিম শীতল বাতাসে করুন সুর নিয়ে,
কোথা থেকে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে-
ছুটে আসে হেমন্ত, দিকে দিকে
নবান্নের উৎসব, ডুগি তবলা আর ঢোল!
চাঁদের জ্যোৎস্না আকাশের বুক ফেঁড়ে ছিটকে পরে
মাটিতে!
লাঠির বুকে লাঠির করঘাত,শিশির ভেজা দূর্বা ঘাস।
উৎসুক চোখ চেয়ে আছে, খেলছে লাঠিয়াল।
নিভু নিভু প্রদীপ শিখা,
ধরে রাখার ক্ষমতা আমার নেই।

তাই মুঠো খুলে চেয়ে আছি, কুয়াশার চাদরে
ওই, এলো কে!
ছমছম নীরবতা, শীতল বায়ু ছুটে আসে
খেজুর রসের কলস কাঁধে করে।
প্রকৃতি ঢেকে যায় কুয়াশার আড়ালে।
তবুও স্বার্থহীন চাঁদ, আলো দিয়ে যায়,
আমার মেঠো পথে, দিঘীর জলে।
রুক্ষতা যেনো ঘিরে ধরে,
বুড়ো বটবৃক্ষটা থরথরিয়ে কাঁপে।

চাঁদ আসে চাঁদ যায় -
ঋতু রাজ ছুটে আসে, ধরত্রীর পাতা ঝড়া শব্দে।
গাছে গাছে পাখি ডাকে, ফুল ফুলে বাসর সাজায়
গঙ্গা ফড়িং টা লেজ নাচিয়ে নাচিয়ে,
ঋতু রাজ কে প্রণাম জানায়।

আসা যাওয়ার এই খেলাতে, বেঁধে রাখা না যাই।
যে যাবার, সে তো চলে যায়।
বিবেকের কাছে রেখে যাই কিছু আহত প্রশ্ন?
উত্তর, জানা নাই!

যে এসেছে, সেই চলে গেছে,
রেখে গেছে কিছু মায়া।
সে মায়াতে ক্ষয়ে যাচ্ছে হৃদয় ও কায়া।
লিখে যাচ্ছে, পেয়ে হারাবার, সে কি যন্ত্রণা।
যে না পেয়েছে, সে কি কভু জেনেছে?
পেয়ে হারাবার সে কি ব্যাথা!
তবুও ভালো থাক, ভালো থাকার তরে
অপরেরে, ব্যাথা দিয়েছে যে প্রিজনে।

শুণ্য হোক ঋতু পরিবর্তনের ন্যায়,
প্রিয় হারা যন্ত্রণাতে।
ফিরে ফিরে আসুক,
আরও ভালোবাসা সাজিয়ে,
নতুন সব হাতে হাত রেখে।
ফিরে ফিরে যাক, পরিবর্তনের হাত ধরে।
তুমি কখনো পূর্ণ হবে না, ভালোবাসার ভূবণে।

তোমার জম্ম দিনে, থাক প্রার্থনা
ইশ্বরের পদতলে -
ব্যাথার অমৃত তোমায় পান করিয়ে।
বাঁচিয়ে রাখেন যেন সহস্র বছর ধরে।

ডিজিটাল জলরং 
অরণ্য নাসিদ 
১৮-১১-১৯

Friday, November 15, 2019

অভিনয়

 
অরণ্য নাসিদ 

ক্লান্তিতে নুয়ে পড়েছে বুড়ো বট বৃক্ষ,
অথচ একদিন শত মানুষ কে ছায়া দিয়েছে, 
একদিন বুক আগলে দাঁড়িয়ে ছিলো,
 ঝড়ের তান্ডব উপেক্ষা করে। 
আজ সে বৃদ্ধ,  ডাল গুলো শুকিয়ে গেছে। 
নুয়ে পড়েছে, পাতা গুলো নিষ্প্রাণ তার। 
পাখিরাও আসে না, এখন আর। 
এক ঝাঁক সাদা বক রোজ নিয়ম করে, 
রাত্রি যাপনে আসতো এই বৃক্ষ শাখায়। 
আজ তারা খুজে নিয়েছে নতুন নিবাস। 
মানুষ গুলো রোজ কুড়াল দিয়ে আঘাত করে, 
অথচ এক সময়,
 শীতল ছায়াতলে কত ক্লান্ত শরীর এখানে নুয়ে পড়ত। 
কেউ এখন খোজ রাখে না,  তার! 
সামান্য বাতাসে ভেঙ্গে পরে,  কুড়ালের আঘাতে 
ক্ষত হওয়া শাখা প্রশাখা। 
এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে প্রবীণ বট বৃক্ষ। 
সময়ের প্রয়োজনে, কত জন আপন হয়! 
অসময়ে সে জন কুড়াল দিয়ে আঘাত করে। 
আসলেই কেউ আপন নাই, শুধু সময়ের প্রয়োজনে 
আপন হবার অভিনয় ।

Tuesday, November 5, 2019

কবিতা- মুক্তিযোদ্ধা

মুক্তিযোদ্ধা 

বিষাদের বিষ যতই পান করাও, আমি মৃত্যুর পর পুনরায় ফিরে ফিরে আসবো, এ আমার অঙ্গীকার। 

স্লোগান করো-
 দেওয়ালে দেওয়ালে ছেপে দাও, নিষিদ্ধ আমি। 
তোমার শহরে, আমার পদচারণ অবৈধ্য।
মোড়ে মোড়ে, কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে নাও,
সময় বড় কম, একবার শুধু একবার যদি 
তোমার ওই বেষ্টনী ভেদ করি! 

সময় এখন তোমার পক্ষে, জীবন এখন 
তোমার জয় গান করে, তুমি এখন অপরাজেয়। 

এখনি সময় -
আমার পাড়া, আমার মহল্লা উচ্ছেদ করো। 

বন্দুকের নল উঁচিয়ে, তাঁক করো আমার বুকে 
টিগারে আঙ্গুল রেখে কি ভাবছো ? 
শত্রু তোমার সম্মূখে, অস্ত্র তোমার হাতে। 

মনে রেখো,
শত্রু এবং অস্ত্রের প্রতি বিশ্বাস রাখতে নেই। 
সময় বহমান,  অস্ত্র হাত হতে হাতে পরিবর্তনশীল। 
তুমি যদি আমার শত্রু হও, 
আর তোমার হাতের অস্ত্র যদি, আমার হাতে থাকে। 
শুধু আওয়াজ উঠবে, শুধু আওয়াজ। 

শত্রু কে সামনে রেখে সময় নষ্ট করার মতো, বোকামী আর কি হতে পারে! 

সময় আছে আমাকে ধ্বংস করো, 
আমার দেশের প্রতিটি ঘরে, আমি লুকিয়ে আছি। 
প্রতিটি মায়ের আঁচলের তলে, আমি স্নেহ পেয়েছি। 
মায়ের দীর্ঘ নিঃশ্বাস, আমাকে কাঁদায়। 

তোমার শহর আক্রমণের পূর্বে আমাকে ধ্বংস করো। 
একশ চুয়াল্লিশ ধারা জারি করো,  
মোরে মোরে তোমার লেলিয়া দেওয়া কুকুর বসিয়ে রাখো। 
দেখলে আমায় গুলি করার অনুমতি দাও -
মনে রেখো ৪৭ এ মরেছি, ৫২তে মরেছি 
৬৯ ও ৭১ এ ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বুক পেতে দিয়েছি। 
যত বার এই দেশের মাটি কলঙ্কিত হবে 
ততবার ফিরে ফিরে আসবো । 
আমি ৪৭, আমি ৫২, আমি ৬৯, আমি ৭১ 
আমি যুগ যুগান্তর। 
আমি মুক্তিযোদ্ধা, আমি বাঙালী 
বাংলাদেশ আমার স্বর্গভূমি।

Monday, November 4, 2019

কবি ও কবিতা


কবি ও কবিতা 
০৫/১১/১৯

আমি একজন কবি,  কবিতার অঙ্গ জুড়ে -
যে অলংকার দেখছো, তা আমার সৃষ্টি। 
শব্দ কে জব্দ  করে,  পরশ পাথরে ছুঁয়ে 
কবিতার অঙ্গে নতুন শব্দ স্থাপন, আমার স্বপ্ন। 
তোমারা হয়তো, কবিতার প্রেমে বিভোর হ'ও 
কবি'র প্রেমে পড়েছো কি? 

তোমরা কবিতার হাসিতে হাসো, 
কবি'র হাসি শুনেছো কি? 
সে হাসি নিষ্পাপ, কিন্তু নিষিদ্ধ এই শহরে। 

কবিতার বিরহে অশ্রু বিসর্জন করো, 
কবি'র বিরহ ছুঁয়ে দেখেছো কি? 
বিরহের গাঢ় নীল, কতটা জমাট বেঁধেছে! 
কত স্বপ্ন ধ্বংসের পর, আবেগ গুলো 
কালি হয়ে রক্ত বমি করেছে! 

দেখনি,  যদি দেখতে! 
তবে জানতে -
কত বিরহ বৎসর পেড়িয়ে, 
কত অনলে নিজেকে পুড়িয়ে, 
এক একটি শব্দ রচিত হয়। 
কত নিশি নিদ্রাবিহীন জেগে থেকে, 
খোলা আকাশের নিচে বসে, 
কত প্রেম বিলীন করে - 
চাঁদের সাথে কবি'র সখ্যতা হয়।

তোমরা যাকে ভাবছো-
আমার কবিতার প্রতিটি শব্দে, 
কখনো প্রেমে, কখনো অভিশাপে জর্জরিত, 
যে প্রতিবিম্ব হয়ে নিজেকে প্রকাশিত হয়
সে কবিতা । 
হা, সে কবিতা। 

আদরে কিংবা অনাদরে,  ক্ষোভ কিংবা সমার্থনে
একজন কবির ভাষা, কবিতা। 

সে'ই কবিতা, ছুটে চলে 
হাত থেকে হাতে বদল হয়,
ভাষা থেকে ভাষান্তর হয়। 
কোথাও বেশ সমাদরে 
কোথাও বেশ ঘৃণাতে 
কবিতা ছুটে চলে,  লোক লোকান্তরে। 

কেউ খুব যত্ন করে,  
কেউ বা  ছুড়ে ফেলে নর্দামাতে। 
কেউ কেউ তো আবার, 
ঝাল-মুড়ির ঠোঙ্গা হিসাবে ব্যবহার করে। 

তবুও স্বার্থপর কবিতা -
ফিরবেনা কবি'র আলোহীন ছোট্ট ঘরে! 

যেখানে বসে,
 কবি তার এক পৃথিবী আবেগ দিয়ে -
শব্দ দিয়ে সাজিয়েছিল কবিতা'রে। 

আজ কবিতা যুবতী, 
দিকে দিকে তার কত নাম ডাক -
কত প্রেমিক, কত বিদ্রোহী, কত উম্মাদ 
কবিতার আলিঙ্গনে প্রশান্তি খোঁজে। 

অথচ 
যে নাবিক তাকে অসীম সাগরের মধ্য হতে 
নিজ হাতে সাজিয়েছিল, একটু 
প্রশান্তি পাবার আশাতে। 
তার নিঃশ্বাস এখন ভারি হয়ে আসে! 

অথচ 
সে লিখেছিল একদিন, 
কবিতা আছে যতদিন
আমার মৃত্যু নেই ততদিন। 

কবিতা অমরত্ব খুজে নিয়েছে, 
কবি সেইপাড় বাঁধা পুকুর ঘাটের পাশে 
বকুল ছায়ার নিচে ঘুমিয়ে আছে। 

তোমরা যে কবিতার ছন্দে উল্লাসিত, 
কিংবা অশ্রুসিক্ত। 
বিক্ষোভে তোমাদের কন্ঠে যখন উচ্চারিত হয়
"মহা বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত,আমি সেই দিন হব শান্ত "
খুজে দেখো বন্ধু,  সে কবিতার অঙ্গে
মিশে আছে কবির বিদ্রোহী সত্তা! 

যার সৃষ্টির প্রেমে মুগ্ধ হও,
 তারে প্রেমে পড়ে দেখো একদিন-
তুমি নিজেই কবিতা হয়ে যাবে।
অতপর,  তুমিও শব্দের অলংকারে অলংকৃত হবে।
তারপর - 
কবি কোন এক সাহিত্য মেলা কিংবা প্রকাশনীতে 
দু- মুঠো অন্ন জোগাতে, তোমাকেও দিয়ে আসবে। 

(অরণ্য_নাসিদ) 
ছবিঃ মোবাইলে ধারণকৃত

এলোমেলো চিন্তা ও একটি আত্মার স্বপ্ন

এক আত্মার কল্পনা 

সূর্য অজানাতে ডুব দেওয়ার পর যেমন, প্রকৃতি রক্তিম মেঘে আলোকিত করতে চেয়ে ব্যার্থ হওয়ার পর, রাতের অন্ধকারের চাদরে ঢেকে যায়। তেমনি আমার চারিপাশ অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে।  পায়ের নিচ হতে ক্রমশ, যন্ত্রণা টা খুব ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠছে।  ঝাপসা হয়ে উঠচ্ছে আমার চারপাশ,  কান্না আর প্রার্থনা ভেসে আসছে। আতর  সুগন্ধি র তীব্র ঘ্রাণ, অথচ এক সময় এতো তীব্র সুগন্ধি ব্যবহার করে, আমার পাশে আসতো না।  শরীর টা খুব ব্যথা,  কেউ ছুঁয়ে দিলে চিৎকার করতে ইচ্ছে হচ্ছে।  বয়স হয়েছে  লোক লজ্জার ভয়ে চিৎকার করতে পাড়ছি না।  
  ভীষণ পিপাসা পেয়েছে,  কলিজা 'টা যেন শত শত বছর জলের সংস্পর্শে আসে নি।  সবাই ব্যস্ত!  আমাকে এক গ্লাস পানি দিয়ে সাহায্য করার মত কেউ এখানে নেই।  অথচ এরা'ই নাকি আমার আপন!  
 কি ভয়ংকর এক স্বপ্ন দেখলাম মাত্র,  চোখের সামনে থেকে কোন মতে দৃশ্য টা দূরে সরে যাচ্ছে না। 

 হঠাৎ বাড়িতে এতো মানুষের আনাগোনা, সবার মুখে আমার নাম।  এক টু অবাক হলাম, এরা কি পাগল হয়ে গেছে?  হাসি পাচ্ছিল, তাদের কর্মকান্ড দেখে৷ 
 কিন্তু শত চেষ্টা করেও হাসতে পারেনি,  খুব ব্যথা শরীরে।  প্রতিটি শিরা উপশিরাতে। একটু উষ্ণ পানিতে গোসল দিতে পারলে,  হয়তো ভালো লাগতো।  এ 'কি এ যে মেঘ না চাইতে বৃষ্টি!  
 কয়য়েক জন কে দেখলাম উষ্ণ পানি নিয়ে আসছে এই দিকে।  
 আমি ক্লান্ত জেনে হয়তো,  অবাক হলাম তখন, যখন আমার শরীরে মানুষ গুলো উষ্ণ পানি ঢেলেছে।  অথচ আমার ক্লান্তি দূর হচ্ছে না।  আমার ক্লান্তি যেনো বেড়েই চলেছে।  আর মানুষ গুলো খুব যত্ন করে যখন আমার শরীরে হাত দিচ্ছে,  যেন পাখির পালকের ছোঁয়া, তবুও তীব্র ব্যথায় কাতর হয়ে আমি চিৎকার করছি!  কেউ যেন কর্ণপাত করছে না।  আতর আর কপূরে ছেয়ে গেছে আমার আদরে বেড়ে ওঠা শরীর।  এর পর আমি আর ও বিমোহিত যখন দেখি আমার প্রিয় জনেরা আমাকে কাঁধে করে কোথায় যেনো নিয়ে যাচ্ছে!  আমার প্রিয় ঘর বাড়ি তিল তিল করে জমিয়ে রাখা স্মৃতি!  আমার ঘরে আমার প্রবেশ নিষেধ করা হচ্ছে।  
 অন্ধকার মাটির নিচে আমার দেহ কে রেখে সকলে চলে যাচ্ছে,  অথচ একদিন ও বাড়ির বাহিরে রাত বেশি হলে এরা চিন্তিত হতো।  আজ অনায়াসে রেখে চলে যাচ্ছে মানুষ গুলো।  আমি কি করে যাই, আমার শরীর রেখে? যে শরীরে বাসা বেধে কাটিয়েছি এতো গুলো বছর।  সে শরীর রেখে চলে যাবো কি করে।  আমি র'য়ে যাই অন্ধকার কবরে।  আলো উঠলে ফিরে যাবো। 
 আলো তো আর উঠলো না!  সূর্য এর দেখাও মিলল না।  আজ অনেক দিন হয়ে গেছে কেউ দেখতে এলোনা। 
 এখন আর শরীরের মায়া নেই,  মাটিতে বিলিন হয়ে গেছে।  অন্ধকারে যত্ন করার সময় হয়নি।  ছোট্ট জীবনের ভুল ভ্রান্তি হিসাবে খুব ব্যস্ত ছিলাম।  ইশ্বর দূত প্রেরণ করেছে।  এক দিনের ছুটি মিলেছে।  তাই নিজের ঘর বাড়ি আর প্রিয় জন দের দেখতে এসেছি।  সবাই দেখলাম দিব্যি আছে,  আমি নেই আমার ঘর টা আজ দখল,  বেশ পরিপাটি,  অথচ এলো মেলো আর অগোছালো থাকতো এই ঘর 'টি এক সময়।  দরজা টা দেখি তালা দেওয়া।  চাবি টা যে কোথায় রেখেছি?  ফিরে যাচ্ছি,  চাবি খুজতে।  সবার সাথে দেখা করলাম কুশল জানতে চেয়ে প্রতি উত্তর পেলাম না।  কেউ আমার কথার জবাব দিলো না।  সম্ভাবত তারা ভাবছে আমি ঘরে চাবি চাইবো!  
 এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে কথা,  ওই দিকে বাঁশি তে ফুঁ দিচ্ছে দূত।  ফিরে যেতে হবে সেই অন্ধকার নিবাসে।  
 সে দিন যাকে খারাপ স্বপ্ন ভেবেছিলাম সে যে আমার স্বপ্ন ছিলো না।  ছিলো আলোকিত পৃথিবী হতে শেষ সময়।




ছবিঃ গুগল 

Saturday, November 2, 2019

বে-খেয়ালি চিঠি

১৮'ই আশ্বিন ১৪২৬
অ'প্রিয়, 

মনের মাঝে গেঁথে থাকা ধুতরা ফুলের শুভেচ্ছা গ্রহণ করো।  গোলাপের শুভেচ্ছা প্রেরণ করে,  গোলাপের পবিত্রতা হরনের দায় ভার গ্রহণ করতে পারবো না বিধায়, সে শুভেচ্ছা হতে তুমি বঞ্চিত।  যদিও জানি অনেকে তোমার বায্যিক রূপের মোহে তোমাকে কত উপমা'তে সাজাতে চাই!  তারা যদি সত্যিকার তুমি কে জানতো, তবে হয়তো। 
 থাক সে সব কথা,  আজ কয়দিন হলো বৃষ্টি হচ্ছে।  অথচ শরৎ কালে এই ভাবে বৃষ্টি হবার কথা ছিলো না।  শরৎ ' র চোখের জলে নিজেকে ভিজিয়ে তোমাকে লিখতে বসা।  অভিযোগের ডায়েরি থেকে। 

শরৎ'র আকাশ'টা এখন ঘন ঘন কাঁদতে বসে,  খুব যত্ন করে, সুর করে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে।  বায়না ধরে, না পাওয়ার যন্তনা নিয়ে, যেভাবে আমার ছোট্ট মেয়েটি কাঁদে দীর্ঘ সময় অব্ধি। 
   অথচ শরৎ আকাশের,  এই ভাবে কাঁদার কোন প্রশ্নই আসে না! 
প্রকৃতি পরম মমতায় শরৎ কে উজাড় করে সৌন্দর্য দিয়েছে। 
 " দু-চালা কুঁড়ে ঘরের  ঘর দেখেছো কখনো"
একবার আমাদের গ্রামের থেকে বেশ দূরে এক গ্রামে,  মায়ের নিকট বর্তী এক আত্মীয় ' র মৃত্যু লাশ দেখতে গেছিলাম। লাশ বলতে মনে পড়ে গেলো স্বজন হারা "মানুষের আর্তনাদ "।  আমি মানুষের আর্তনাদকে সহ্য করতে পারি না, বুকের মাঝে পাথর সম ব্যথা অনুভূতি হয়।  তাই মৃত্য মানুষের লাশ দেখতে যাই না। তো' সে দিন মা' খালাদের স্বজনহারা আর্তনাদ আমি সহ্য না করতে পেরে, ছুটতে ছুটতে বহু দূর চলে গেছিলাম।  চোখের সামনে এক দু-চালা মাটি ও খড়ের বাড়ি দেখলাম।  অন্য কোন একদিন সে বাড়ি নিয়ে লিখবো।  আজ আর সেদিকে না যাই, শুধু সেদিনের সে রূপ প্রকাশ করতে হলে আমার আজ রাত শেষ হবে।  এতো টুকু'ই বলবো,  গ্রামের এক জন কৃষকের বাড়ি ফুল গাছের বাগান আর নৈপূনতার যেমন কোন কমতি থাকে না।  যতটা সুন্দর তোমাদের শহরের মানুষের কল্পনাতীত ততটা সুন্দর করে,  প্রকৃতি প্রলেপ লেপ্টে দেয় শরৎ এর রূপে। 
   তবু ও দেখো স্বজন হারা হয়ে আর্তনাদে দুক'ড়ে দুক'ড়ে কাঁদছে।  কি'যে তার শূন্য,  কি'তার বিষন্নতা  কেউ জানতে'ও চাই না।  সকলে শরৎ এর রূপ দেখে,  কাশফুলের ছোঁয়া পেতে উম্মূখ হয়ে ওঠে। 

  অথচ,  শরৎ এর আকাশ কে কেউ কোন দিন প্রশ্ন করে না,  কি ব্যথার বেদনে সে বিভোর?  

আমার খুব জানতে ইচ্ছে হয়,  আমার মত'ই আকাশের কোন প্রতারক তুমি ছিলো কি'না?  

    যাই হোক তুমি কেমন আছো? নিজের স্বার্থের জন্য যে সব উজাড় করে বিলিয়ে দিতে জানে,  তার তো আর খারাপ থাকার প্রশ্ন' ই আসে না।  তুমি নিশ্চয় ভালো আছো? 
কি ভাবছো?  তুমি ভালো থাকো এটাই আমি চাই! 
প্রশ্ন'ই আসে না!  আমি অত'টা উদার নাই।  
যে আমাকের গ্রীষ্মের দাবানলে দহন করবে,  তার আকাশে বর্ষার মেঘ হয়ে বর্ষিত হব!  বরং চৈত্রের কঠিন রবিরাজের অগ্নিপথে বাতাস হয়ে প্রবেশ করবো।  যেমন টা কামাড় লোহা কে কয়লা'র উপর রেখে অক্সিজেনের অবাদ প্রবেশের জন্য আগুনকে জ্বালতে সারাদিন শ্রম দেয়। 
আজ অনেক অভিমান অভিযোগ মনের অভ্যন্তরে ধাক্কা দিচ্ছে,  কলমে আর কাগজে অশ্রু হয়ে জমা হচ্ছে।  গত চারটি বছর কখনো ভুল হয়'নি, কিংবা শত প্রচেষ্টা করে ও তুমি আটকে রাখতে পাড়নি আমাকে সর্ব প্রথম অভিনন্দন জানতে তোমার জম্মদিনের।  
  অথচ এই প্রথম তোমার জম্মদিন আসছে, (আগামী কার্তিকে)  অথচ আমার কোন পরিকল্পনা নেই।  
অবশ্য তুমি আমার কোন কিছু'তে নেই।  আছো অভিযোগ আর অভিশাপের খাতাতে।  তোমার প্রতি আমার অভিযোগ গুলো মিথ্যা ছিলো না কখনো,  নিজেকে পরিবর্তের চেয়ে নিজেকে বিলিয়ে দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছো।  এখনো তাই করছো৷  
তোমাকে লিখতে চাইলে যেনো লিখে যেতেই ইচ্ছে হয়।  যদি ' ও জানি তুমিবকোন দিন পড়বে না।  আর ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে কখনো কোন ভাজ হয়ে থাকা পৃষ্ঠা 'ই পেয়ে যাও।  নাম পরিচয় হীন চিঠি,  তবে সে'দিন ও তোমার বুঝতে  ভুল হবে না এই চিঠি র মালিক যে তুমি'ই,  এক কথা মনে করতে।  
 কারন বিশ্বের একমাত্র আমি' ই যে কিনা, তার প্রিয় মানুষের আঁখি পাতে শরৎ'র আকাশের ন্যায় অবিরাম জলধারা বয়ে যেতে দেখতে চাই।  আমি জানি সেদিন এই চিঠি পড়ে তুমি বিরক্ত বোধ করবে।  তার চেয়ে বেশি বিরক্ত বোধ করবে ' জ্যোৎস্নার আড়ালে যে বিষ ধারণ করে চাঁদ' শিরোনামের গল্প পড়লে।  তোমার চরিত্র গুলো বাস্তব তুমির সাথে মিলিয়ে পাঠক সমাজে যতটুকু নোংরামি প্রকাশ সম্ভাব ততটুকু প্রকাশ করবো।  হয়তো সম্পূর্ণ তোমাকে প্রকাশ করলে পাঠক সমাজে আমাকে চটি লিখক নামে আখ্যায়িত করা হতে পারে।  কিংবা অশ্লীল বই লিখার অপরাধে জেল জরিমানা হতে পারে।  সে ভয়ে তোমাকে প্রকাশ করতে পারেনি।  যদি প্রকাশ করা সম্ভাব হতো, তবে তোমাকে জম্ম দেওয়ার অপরাধ বোধে এই পৃথিবী, অন্য কোন গ্রহের সাথে স্বংঘর্ষিত হয়ে ধ্বংস  হবার চেষ্টা করতো। নিজের সম্পর্কে এতো নষ্ট সত্য কেউ সহ্য করতে পারবে না কোন দিন।  এমন 'কি তুমিও না। 
যতই লিখবো না ভাবতেছি তত'ই,  তোমাকে নিজের মাঝে আবিষ্কার করছি।  তাই ইচ্ছের বুকে মাটি চাপা দিয়ে শেষ করছি। 

 ভালো থাকার প্রর্থনা তোমাকে অনেকে করে, আমি করবো না। তুমি বরং কয়লা'র অগ্নিতাপে লোহা'র মত অগ্নিদগ্ধ হ'ও প্রতিনিয়ত। 

                                             ইতি
                                   তোমার অভিশাপ

ছবিঃ গুগল

Friday, November 1, 2019

কবিতা - বিলীন হতে'ই বেঁচে থাকা







বিলীন হতে'ই বেঁচে থাকা 
০১/১১/১৯

আগুন ছুঁয়ে দিলে, হাত পোড়ে ; দগ্ধ হই! 
ভুলে যাই সে ব্যথা। 
ভুলে যাই, সাঁঝের বেলা 
সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালতে হয় সে  কথা ।

মাঝ রাতে চন্দ্র কথা , কাকে গল্প বলি 'বল ?
কে বা আর, মধ্যরাতে গল্প শুনতে চাইবে ?

শূন্যে শব্দে ছুড়ে দিই , 
শূন্য থেকে প্রতিশব্দ শুনি , কান পেতে ।
শূন্যে চেয়ে থাকি, শূন্যে শূন্য দেখি! 

দুধের সাগরে  ডুব দিয়ে , যে চাঁদ জ্যোৎস্না দিচ্ছে,  
তার দিকে ফিরেও চাই না ,  এখন আর! 
কেউ তো প্রশ্ন করবার  নেই, এখন
বলতো কে সুন্দর? আমি না চাঁদ! 

প্রতি উত্তর ছিল-  'চাঁদ'

বড় অভিমানী ছিলি তুই! 
কবিতা কিংবা কথাতে,
 কখনো অন্য কারও প্রশংসা
সহ্য হতো না তোর। 
তা'আমি জানি! 

অভিমানে কিছু সময় নিশ্চুপ থেকে ,
নিজেই বলতিস -

আচ্ছা, চাঁদ কি আর আমার মতো হাঁসতে জানে?  আমার মতো - 
তার কি সুন্দর দুইটা  চোখ আছে ? 
নাকি সে ভালবাসতে জানে? 
সে কি আর তোর অধরে অধর ছুঁয়ে ' 
শিহরণ তোলে? 
আঙুলে আঙুল ছুঁয়ে, দূরে পালাতে যানে? 
না'কি নীল শাড়ী, অঙ্গে পেঁচিয়ে 
চুড়ি নিবে বলে বায়না ধরে? 
সে কি আর আমার মত,  অভিমান করে? 

আমি হাসতাম, আর হাসতাম। 

ভাবতাম'ও বটে ; এ কি শুধু অভিনয়? 
নাকি ভালোবাসার আহ্লাদী অভিলাষ! 

আজ আর ভুল করেও মনে করি না ' 
ভুলে ভরা সে সময়।  
জেনে 'তো' গেছি সব'ই ছিলো অভিনয়। 

চাঁদ আমাকে রেখে হারিয়ে যায় নি, আজ'ও 
অথচ তুই !

নিজের মাঝে নিজেকে হারিয়েছি , তোকে'ও। 
শূন্যে দেখি নিজেকে , শূন্যে ভাসি 'শূন্য হয়ে ।
কি যেন হয়েছে আমার! 

আমার মাঝে আমার, নেই তো বসত আর ।

আগুন ছুঁয়ে দিলে, হাত পোড়ে ; দগ্ধ হই! 
ভুলে যাই,  মূহুর্তে সে ব্যথা ! 
ভুলে যাই, সাঁঝের বেলা-
 সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালতে হয়, সে কথা ।

এখন শুধু মনে হয়, 
আমার মাঝে আমি থাকি না, অন্য কার ও বাস। 

আমি যেনো, কষ্টের মৃত্তিকা কামড়ে ;
ঠাঁই রোদ্দুরে পুড়ে যাওয়া - 
অথচ পথিকেরে পরম মমতায় 
ছায়া দান কারি,  অশ্বত্থ বৃক্ষ। 
যার অনুভূতি আছে, কিন্তু প্রকাশের ভাষা নেই। 
যার ব্যথা আছে, কিন্তু অশ্রু নেই। 
যার আকুতি আছে, কিন্তু কোন মিনতি নেই। 
যার প্রার্থনা আছে, কিন্তু আকাঙ্ক্ষা নেই। 
যে বেঁচে আছে শুধু বিলিয়ে দিতে, 
আর বিলীন হতে।


অরণ্য নাসিদ 
ছবি - গুগল 

কবিতা - কুঁড়ে ঘর

কুঁড়ে ঘর


একটা ভাঙা কুঁড়ে ঘরের স্বপ্ন ছিলো,
তাল পাতার ছাউনিতে ঢাকা ছিলো ,
রাতের আধারে মেঘের বুক চিরে,
জ্যোত্স্না উঁকি দিবে কথা ছিলো।
বর্ষার আকাশ কেঁদে কেঁদে আমাকে
স্লান করাবে , এমন ও স্বপ্ন ছিলো ।
কথা ছিলো জোনাকির সাথে ,
কথা ছিলো রাত জাগা পাখির সাথে।
কথা ছিলো হাসনাহেনা ও শিউলীর সাথে ।
কথা ছিলো কোটি কোটি তারার সাথে ।
কথা ছিলো আধারের সাথে ,
কথা ছিলো কুড়ে ঘরের স্বপ্ন দেখবো বলে ।
কথার গলে , বিষের মালা , আমি এক ছন্নছারা ।
সব কথা ছুড়ে ফেলে , নিজেকে নিজে করেছি বড় অবহেলা ।
আজ এই রাত সাক্ষী , আবার কোন এক শরত্ এ ঘুম হরণকারী-
চাঁদের আলোতে কথা দিবো ।
সত্যিই আমি কথা দিবো , একটা
ভাঙা কুঁড়ে ঘর, তোকে দলিল করে দিবো ।
তালপাতার সে ছাউনি , টিপ টিপ
বৃষ্টির ফোঁটা , রাত জাগা কল্প কাহিনী ।
আঁধারের বুক চিরে , কদম-কেয়া, জুঁই বেলীর সৌরভ মাখা সেই রাত।
আমার আজম্ম পাপ, বৃষ্টির ছন্দে
তোর শীত্কার - ফুল হীন সে ঘর ।
অথচ বুনো ফুলের সৌরভ -
তোর আর আমার ফুলশর্য্যার সে রাত।
একটি মাত্র ভাঙা কুঁড়ে ঘরের দলিল
তোর হাতে আমার হাত ।
ভালোবাসায় কেটে যাবে সহস্র রাত।



                                                               অরণ্য নাসিদ
ছবি - গুগল 

কবিতা -এলোমেলো আমি

এলোমেলো আমি
    অরণ্য নাসিদ




অভিমান ও অভিযোগ
ভালোবাসা ও ছলনা।
আমার দুই চোখ,
দেখে ভিন্ন ভিন্ন।
আমার দুই হাত
এক হাতে স্বর্গ, অন্য হাতে নরক।
কখনো ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে হয়,
কখনো দূরে হারিয়ে যেতে।
কখনো তোমাকে দেখি -
কখনো তোমার ছলনাকে।
কখনো ক্ষোভে অভিমানে হই হিংস্র,
কখনো তোমার আঁচলে মুখ লুকিয়ে ছোট্ট শিশু।
কখনো কখনো ইশ্বর মনে হয় নিজেকে-
সকল বাধাকে উপেক্ষা করে, সব নিয়ম কানুন-
পদতলে রেখে হাসতে ইচ্ছে হয় বিজয়ের হাসি।
কখনো কখনো নিজেকে বড় অপরাধী ভাবতে ইচ্ছে হয়।
মনে হয় জগৎ জুড়ে যতো পাপ, সব কারনে মিশে আছি আমি!
আমি যেন অলিখিত ইবলিশ শয়তান।
নিজেকে নিয়ে ভাবতে বড্ড ভালো লাগে এখন -
নিজেকে অবতার ভেবে! জনসস্মুখে মুচকি হেসে আসি ইচ্ছে হলে।
দিন ও রাত
সকাল ও সন্ধ্যা
পৃথিবীর কক্ষ পথে পা রেখে চলে
আমার অসঙ্গত ইচ্ছে ধারা।
আমার মস্তিক জুড়ে এলোমেলো চিন্তাধারা
আমি বোধ করি পাগল হয়ে যাচ্ছি।


ছবি- গুগল 

Thursday, October 31, 2019

যে শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাত্রে

ছাড়পত্র





যে শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাত্রে
তার মুখে খবর পেলুম ঃ
সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক ,
নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার
জম্মমাত্র সুতীব্র চিৎকারে ।
খর্বদেহ নিঃসহায়, তবু তার মুষ্টিবদ্ধ হাত
উত্তোলিত, উদ্ভাসিত
কী এক দুর্বোধ প্রতিজ্ঞায় ।
সে ভাষা বোঝে না কেউ ,
কেউ হাসে , কেউ করে মৃদু তিরষ্কার ।
আমি কিন্তু মনে মনে বুঝেছি সে ভাষা ।
পেয়েছি নতুন চিঠি আসন্ন যুগের _
পরিচয় -প্ত্র পড়ি ভূমিষ্ঠ শিশুর
অস্পষ্ট কুয়াশাভরা চোখে ।
এসেছে নতুন শিশু , তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান ;
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ , মৃত আর ধবংসস্তূপ-পিঠে
চলে যেতে হবে আমাদের ।
চলে যাব_তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক"রে যাবো আমি _
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার ।
অবশেষে সব কাজ সেরে
আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে
করে যাবো আশীর্বাদ ,
তারপর হব ইতিহাস ।



                                                 
  সুকান্ত ভট্টাচার্য

ছবি- গুগল

বাংলা প্রহসনের সার্থক স্রষ্টা

মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা প্রহসনের সার্থক  স্রষ্টা





বঙ্কিম ছিলেন বাংলা উপন্যাসের স্রষ্টা , রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বাংলা গল্পের স্রষ্টা , তেমনি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা প্রহসনের সার্থক  স্রষ্টা।

এখন আমাদের জানা প্রয়োজন "প্রহসন" কি? 

হাস্যরসময় জীবনলেখ্য রূপায়িত হয়ে ওঠে।  যেখানে সমাজের কুরীতি শোধানার্থ রহস্যজনক ঘটনা সম্বলিত হাস্যরস - প্রধান একাংকিকা নাটককে বুঝায়।

বর্তমান কালে প্রহসন বলতে অতিমাত্রার লঘু কল্পনাময় , অতিশয্য়ব্যঞ্জক , হাস্যরসোজ্জ্বল সংস্কারমূলক নাটককে বুঝায়।

*** ইংরেজি farce শব্দের প্রতিশব্দ হিসাবে প্রহসন শব্দটি এসেছে।

***  বাংলা প্রহসন বলতে "কৌতুক ও ব্যঙ্গরসাত্নক সর্ববিধ নাটক কে বুঝানো হয়।

মাইকেল মধুসূদন  দত্তের দুইটি প্রহসন মূলক রচনা

১. একেই কি বলে সভ্যতা
এবং
২. বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো




তথ্য - পঞ্চম প্রকাশ
প্রকাশক - মোঃ ফজলুল হক 
সুচয়নী পাবলিশার্স  
ছবি - গুগল 

Wednesday, October 30, 2019

কবিতা

নিঃসঙ্গতার অভিশাপ
২/১০/১৮
নিঃসঙ্গ আমি, চৈত্রের আকাশে পাতা হীন শুষ্ক বৃক্ষের ন্যায় ।
নিঃসঙ্গ আমি, বিশাল আকাশে দহনরত দিবাকরের ন্যায় ।
নিশ্ততি রজনীতে একা শশী, যেমন নীরব নিথর , নিঃসঙ্গ তেমন আমি।
মাথার উপর শূন্য নীরদ , তাহার উর্‌দ্ধে নীলাভ অনন্ত ।
প্রবাহিণী হয়ে ছুটে চলেছি , বন বনান্তর পেরিয়ে মহীন্দ্রের খোঁজে ।
কোথায় হে জগদীশ্বর , আমি প্রতিবাক্যের প্রতিক্ষাতে আছি ।
নিঃসঙ্গতা নিয়ে পথ চলি ,আমার এই এই নিঃসঙ্গতা তাহাকে করি উৎসর্গ -
যাহার প্রবঞ্চনাতে হয়েছি আমি ক্ষতবিক্ষত ।
অভিশাপে অভিশপ্ত করে হৃদয় যাহাকে , নিঃসঙ্গতা ঘিরে থাক
ওগো পরমপুরুষ প্রার্থনা তোমার কাছে ।
বারিধারা যেমন অঝরে ঝড়ে ,ঝড়ে যেন তেমনি তাহার আঁখিপাতে।
যে শর্বরী দিয়ে মোরে বিষজ্বালা , সুখের তটিনীতে ভাসাইলো ভেলা
সে যেন কভু না খুঁজে পাই সে সুখের ঝর্ণা ধারা ।
কোথায় হে কালপুরুষ , সময় বহতা নদীর ন্যায় বয়ে যায়
আপন কর্মে মনোনিবেশ করো এবার ,পাপীর পাপ যে গগন ছুঁয়ে যাই ।
কোথায় দন্ডনায়েক দন্ড দাও - দন্ড দাও , পাপিষ্ঠ যে স্বর্গে পদার্পণ -
করতে চাই ।
নিঃসঙ্গ হয়েছি যে ছলনাময়ীর ছলনাতে , তাহার ধ্বংস দেখে মরিতে চাই ।
নীলকন্ঠে বাসকির বিষ ধারণ কারী নটরাজ প্রলয় নৃত্যের কাল বয়ে যায়,
মহাপ্রলয় নৃত্যর মেতে ওঠো ওগো , প্রলয় নৃত্যকারী ।
প্রেমীকা রূপে এসেছে দেখো রক্তপান কারী চন্ডী ।
রবি শশী নিভে আঁধার ঘনিয়ে আসুক,নিদ্রা দেবী নিঃসঙ্গতার সঙ্গী হও ।




তুমি যাকে ভালোবাসছো , শ্রদ্ধা করছো , যার উন্নতির জন্য দিনরাত দোয়া করছো ......... একটু খোঁজ নিয়ে দেখবা - সে তোমাকে ন্যূনতম মূল্যায়ণটুকুও করে কিনা ! একটু চোখ বন্ধ করে নিজের আত্মাকে বিড়বিড়িয়ে জিজ্ঞেস করবা - সে তোমাকে তোমার মতো করে আদৌ কখনো ভালোবেসেছে কিনা !
জীবনে অনেক মানুষই তোমার কাছে সাহায্য চাইবে , এমন কাওকে সাহায্য করবা না যার জন্য তোমাকে পরবর্তীতে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হয় ! আড়ালে চোখের পানি ঢাকতে হয় !
জীবনে রক্তের সম্পর্ক ব্যতীত কারো জন্যই অত্যাধিক আবেগ তাড়িত হবা না ...... , বিশেষ কাওকে বাঁচানোর জন্য আগুনে লাফ দিয়ে হঠাৎ তুমি খেয়াল করবা - যার জন্য লাফ দিলা সে নিজেই লাফ দেয়নি ...... মুচকি হাসছে ! মধ্য দিয়ে তুমি ই ঝলসে যাচ্ছো l তোমাকে অঙ্গারিত করে বিচক্ষণ মানুষটা করে নিয়েছে নিজ স্বার্থ উদ্ধার !
কিছু কিছু সেনসেটিভ কথা , তোমার মনের দূর্বল স্হান , তোমার কনফিডেন্সের লেভেল ভুলেও কারো সাথে সহজে শেয়ার করবা না l তোমার হৃদয় এফোড় ওফোড় হয়ে যাবে যখন তুমি হা করে দেখবা - তোমার দেয়া তথ্যগুলোই বুমেরাং হয়ে তোমাকে ঘায়েল করছে l
কারো জন্য বেকুবের মতো শুধু করেই যাবা না ! সবসময় give and take নীতিতে চলবা l নতুবা একদিন বুঝবা যার জন্য এতো কিছু করলা ........ সে তোমার অবদানটুকু স্বীকার তো করছেই না বরং তোমার ক্ষতি করতে মরিয়া l একটা কথা সবসময় মনে রাখবা - ' মাত্রাতিরিক্ত অধিকার ই অনধিকার চর্চার জন্ম দেয় l '
জীবনে কখনো অন্যায়ের সাথে , নীতির সাথে আপোষ করবা না ....... যদি সবাই তোমাকে ছেড়ে উল্টো রাস্তায়ও হাঁটে তবু তুমি তোমার নীতিতেই ইস্পাতদৃঢ় থাকবা l হতাশাগ্রস্ত হবা তুমি ........! তবুও হাল ছাড়বা না , একা পথ চলতে চলতে হঠাৎ তুমি দেখবা স্বয়ং ঈশ্বর কিছু প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন তোমার জন্যই , অথচ তাদেরকে তুমি বিপদে তোমার পাশে পাবে কখনো কল্পনাও করোনি ! দেখবা তোমাকে ভালোবেসে তোমার প্রতিরক্ষার জন্যই হঠাৎ ইস্পাত কঠিন বাঙ্কার তৈরি করেছে তারা ! তোমার ক্ষতি তখন কেওই করতে পারবে না l
নীতির সাথে আপোষ না করার কারণে যদি তোমার চূড়ান্ত ক্ষতি হয়েও যায় ........ তবুও সৎ পথে থেকেই চুপচাপ তা হজম করে নিবা , বিশ্বাস রাখবা ঈশ্বরের উপর l
কালের পরিক্রমায় তুমিই বুঝবা , সেদিনের ঐটুকু ক্ষতি ঈশ্বর হাজার গুণ বেশি তোমাকে পুরুস্কার হিসেবে পরিশোধ করে দিয়েছেন l
সবসময় মিষ্টিভাষী মানুষ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকবা l বদমেজাজি বন্ধুটাকে মিষ্টিভাষী বন্ধুটার চেয়ে বেশি মূল্য দিবা l একটা কথা মনে রাখবা ..... বদমেজাজি বন্ধুটার হৃদয়টা পরিস্কার , অন্যদিকে মিষ্টিভাষী বন্ধুটার হৃদয় হতে পারে জিলাপীর প্যাঁচের মতো l তোমার বিপদ এলে বদমেজাজি পাগল বন্ধুটাই আগে তোমার সুরক্ষায় এগিয়ে আসবে , মিষ্টিভাষী বন্ধুটা কখোনোই নয় , ইনিয়ে বিনিয়ে পাশে না থাকার নানা অযুহাত দাঁড় করাবে l
তবুও কিছু কিছু মানুষ আজীবন ঠকেই যায় ...........
কিছু কিছু মানুষ নীরবে কেঁদে যায় .............
কিছু কিছু মানুষ হঠাৎ খোলস বদলাতে পারেনা ............
এই কিছু কিছু মানুষ গুলোর জন্যই পৃথিবীটা আজো এত্তো সুন্দর l
- Asif Soikot ( আসিফ শুভ্র )
( বি:দ্র:- এলোমেলো চিন্তাভাবনা .......... একান্তই ব্যক্তিগত মতামত )


পূর্বদিকে মুখ করে পা দুটো সামনে সটান ছড়িয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে আকাশে চেয়ে বসে আছে আব্দুল খালেক। রাজ্যের বিরক্তির ছাপ তার চোখে মুখে। একটু আগে ওঠা সুর্যের লাল আলো ঠিকরে পড়ছে মুখে। কিছুটা মুখোমুখি বসে খালেকের দিকে নিষ্পলক চেয়ে আছে আছিয়া। সকালের লাল মিঠে রোদ খালেকের চোখ-মুখে তৈরী করছে কি যেন এক পবিত্র ও করুণ ময়াবী আভা যা নদীর পাড় ভাঙ্গার মত ভাঙ্গছে আছিয়ার বুক। বেশ ক’মাস পর আজ সে মামা বাড়ি এসেছে। আসতে তো রোজই মন চায় কিন্তু বিয়ের পর অনেক ইচ্ছাকেই পাথর চাপা দিয়ে রাখতে হয় তাকে। তাইতো ইচ্ছে করলেই আসতে পারে না। নয়মাস হলো বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পর এই দ্বিতীয়বার আসা।
ভাই.. ও ভাই কেমন আছো? ভাবলেশহীন বসে থাকা খালেককে ডাকলো আছিয়া।
নিষ্পলক, নিরুত্তোর খালেক চেয়ে রইলে আকাশের দিকেই।
আছিয়ার বড় মামার বড় ছেলে খালেক। ছোট ছেলের নাম মালেক। তার সাথে এখনো দেখা হয়নি। আছে হয়তো কোন কাজে ব্যস্ত। মামা মারা গেছে আটমাসের মতো হলো। এর পর থেকে বাড়ির সবতো মালেককেই সামলাতে হয়।
কিছু সময় বিরতি দিয়ে আছিয়া আবার ডাকলো খালেককে। বার কযেক ডাকার পর পলকের জন্য চোখ নামালো আছিয়ার দিকে তার পর আবার আকাশে দৃষ্টি। শূণ্যে তাকিয়ে নিষ্পৃহ গলায় বললো - কে? তুমি কে?
জমে থাকা ব্যথা যেনো ফেনায়িত হয়ে উঠলো আছিয়ার বুকের ভেতর। নিজের অজান্তেই চোখের কোন গলিয়ে টপ টপ করে দু’ফোঁটা পানি মাটির বারান্দায় পড়ে হারিয়ে গেল নিমিষেই। অন্তর যেন কেঁদে কয়ে গেল, এ কোন পরিহাস। আজ তুমি আমাকে চিনতে পারছো না!
কাঁপা গলায় বললো, আমি আছিয়া- চিনতে পারছো না ভাই? একটু মনে করার চেষ্টা করো, সেই যে.. বলেই থেমে গেল। হেমন্তের ঠান্ডা বাতাসের মতো করুণ সে কন্ঠ বাতাসেই মিলিয়ে গেল। নিজেই নিজেকে বললো, কি আজ আর মনে করিয়ে দেবো তোমাকে! যা মনে করাতে চাই তা যে আজ আমার মুখে প্রকাশ করার অধিকার নেই।
পাঁড়ভাঙ্গা নদীর মতো তোলপাড় হচ্ছে আছিয়ার ভেতরে কিন্তু খালেকের ভাবান্তর নেই। খালি গায়ে আধছেড়া লুঙ্গী আর ধুলো ময়লা জড়ানো পা নিয়ে বসে আছে নিস্তরঙ্গ। বুকের হাড়গুলো গোনা যায়। চোখ ঢুকে গেছে কোটরে তবুও তা ভীষণ স্বপ্নাতুর এখনো। আছিয়া তার পাশে রাখা ব্যাগ থেকে বের করলো কলার পাতায় মেড়ানো একটু স্বন্দেশ। একেবারে টাটকা, এই সকালেই শ্বশুরবাড়ি থেকে আসার পথে কিনেছে নেঙুড়াহাট থেকে। ভবেশ ময়রার দোকান, খুব নামকরা মিষ্টি ঘর। পাতাটা খুলে আছিয়া স্বন্দেশ বাড়িয়ে ধরলো খালেকের দিকে।
ভাই একটু খাও। কতো পছন্দ ছিলো এই স্বন্দেশ তোমার। একটু খাও, ভাল লাগবে।
আজকাল খালেক কোন খাবারই মুখে তুলতে চায় না। সময় নিয়ে ভালবেসে বুঝিয়ে সুঝিয়ে কিছু খাওয়ানোর মতো সময় এখন আর কেউ তার পেছনে ব্যয় করে না। আর তাছাড়া কারই বা সময় আছে। সংসারটা চালানো আগে জরুরী।
হাত বাড়িয়ে খানিকটা স্বন্দেশ মুখে পরে নিলো খালেক। মুহুর্তেই ওয়াক থু বলে বের করে দিলো। চিলের মতো ছো মেরে আছিয়ার হাত থেকে কলাপাতা কেড়ে নিয়ে ছুঁড়ে দিলো রাস্তায়। রেগেমেগে চিৎকার করে উঠলো- খাওয়া যায়? তেতো বিষ। বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে বামপাশের চোখের কোনে এক ফোঁটা জল জমলো আছিয়ার। এই জল কারণে না অকারণে তার ব্যখ্যা সে জানেনা। শুধু স্বগোতক্তির মত বললো- কি নিষ্পাপ কি পবিত্র একজন মানুষ অথচ তার ভাগ্য কি নিদারুণ।
তুমি কে গো, একটু সরে যাও দেখি এখান থেকে। ওই যেন কারা আসছে দেখতে দাও একটু- বলে বারান্দার কিনারে এগিয়ে গেল খালেক। একদল মানুষ উত্তরদিক থেকে গান গাইতে গাইতে কাঁচি হাতে দক্ষিণের দিকে মাঠে যাচ্ছে ধান কাটতে। এই লোকগুলো বাইরের গ্রাম থেকে এসেছে শয়লার একব্বর মোল্লার বাড়িতে আমন ধান কাটার কাজ করতে। প্রতি বছরই আসে। বারান্দার কাছাকছি আসতেই খালেক গলা বাড়িয়ে বললো ও ভাই তোমরা কারা? কোথায় যাচ্ছ? দলের মধ্যে থেকে একজন বললো কেনরে পাগলা যাবি না কি আমাদের সাথে? আমরা ধান কাটতে যাই।
কথা শুনে হো হো করে হাসতে শুরু করলো খালেক। টানা মিনিট দুয়েক হাসার পর হঠাৎ থেমে গেল। আরেকবার উঁকি দিয়ে তাকালো লোকগুলোর দিকে- ততক্ষণে তারা দক্ষিণদিকে অনেকটা এগিয়ে গেছে। খালেক পেছন দিকে সরে এসে আবার শাস্ত হয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসল। আকাশের দিকে চোখ করে গাইতে শুরু করলো-
‘ও দূরকে মুসাফির হাম কো ভি সাথ লে লে রে
হাম কো ভি সাথ লে লে হাম রহে গেয়ে একেলে...’
যেন হুড়মুড় করে ভেঙ্গে যেতে চাইছে আছিয়ার ভেতরটা। না পারছে সইতে না পারছে কউকে বুঝাতে। কি মানুষ কি হয়ে গেল।
আটচালা মাটির ঘরের পূর্বপাশের বারান্দায়দিন-রাত শিকলে বাঁধা থাকে খালেক। আজ দু’বছর হলো তার পায়ে শেকল উঠেছে। সাথে ওই শিকলে আটকে আছে স্বযতনে লালন করা আছিয়ার যত স্বপ্ন। যে স্বপ্নের কথা আছিয়া ছাড়া জানতো শুধু খালেক। আজ আর তা কেউ জানে না।
হঠাৎ মালেকের গলা শুনে কেমন যেন চমকে উঠলো আছিয়া- বু কেমন আছ? কখন এলে?
এই তো এলাম রে ভাই। তুই কোথায় ছিলি? দেখছিনা যে।
মালেক গিয়েছিল বিলের তলায়। এক খন্ড জমিতে কিছু ধান ছিলো ওটা কাটতে।
-সকালে উঠে ছুটেছিলাম মাঠে, এখন আসলাম। বু চলো বাড়ির ভেতরে যাই। সকালের খাববারের সময় হয়ে গেল। এখানে বসে থেকে কোন লাভ নেই শুধু কষ্ট বাড়বে।
বারান্দা থেকে নেমে মালেকের পিছন পিছন বড়ির ভেতরে পা বাড়ালো আছিয়া অথচ দৃষ্টি পড়ে রইলো খালেকের উপর যতক্ষণ দেখা যায়।
গরম ভাত, বাগান থেকে তুলে আনা বুনো কচুর লতি আর পুটি মাছের ঝোল। কিন্তু ভাত গলা দিয়ে নামছে না আছিয়ার। খাওয়া থামিয়ে মুর্তির মতো বসে আছে। কত কথা থেকে থেকে তার মনে আসছে। এই চাটাইয়ের বেড়া দেয়া রান্নাঘরে কাঠের পিঁড়িতে বসে কতোবার একসাথে ভাত খেয়েছি সবাই। যখনি এই বাড়িতে এসেছি ও খ্যাপলা জাল নিয়ে নেমে যেতো পুকুরে আর আমি পুকুরঘাটে পানির উপর নুয়ে পড়া জবাফুলগাছটার উপর বসে মাছ ধরা দেখতাম। এই পুকুরে একসাথে কত ডুব সাঁতার খেলেছি। উত্তরের বিলে ভর দুপুরে ছুটে গেছি শাপলা তুলতে। গোয়াল ঘরের পেছনে বুড়ো ছাতিম গাছের নিচে মেতেঠি এক্কা দোক্কা খেলায়। দিনের আলো নিভে এলে পুকুরের উত্তরপাশের বাঁশবাগনে রাজ্যের পাখিদের কলরব শুনতে শুনতে একসাথে বাড়ি ঢুকে বারান্দায় বসেছি আর চেয়ে থেকেছি সাদা বকের উড়ে যাওয়ার দিকে। এমনি করে কখন যে দুটি কচি প্রাণ এক হয়ে গেছে তা কেউ বুঝতে পারিনি।
একবারের কথা খুব মনে পড়ে। সেবার বাড়িতে মামী ছাড়া অন্য কেউ নেই। কলেজ থেকে এসে ও নেমে গেল পুকুরে মাছ ধরতে। অমি যথারীতি ফুলগাছের উপর উঠে পড়লাম। একটা করে ফুল ছিড়ি আর ওর গায়ে ছুড়ে মারি। কপট অভিমান দেখায় তবে বিষয়টি যে তার ভাল লাগছে তা বুঝতে পারি। এ ডাল থেকে ও ডালে হাত বাড়াচ্ছি ফুল ছিড়তে। অসতর্ক মুহুর্তে হঠাত গেল পা পিছলে।ভয় পেয়ে মাগো বলে চিৎকার দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। লজ্জায়আর চোখ খুলতে পারি না। হাটু অব্দি পানির মধ্যে দাড়িয়ে হাতের জাল ফেলে খালেকভাই আমাকে ধরেছে। যখন চোখ খুললাম তখন দ্রুত কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে চারদিকে তাকিয়ে বললো- ভাগ্যিস কেউ দেখেনি।
ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তেই ফিক করে হেসে উঠলো আছিয়া। মামী তা লক্ষ্য করলেন। কি রে মা, তোর আবার কি হলো? ভাত মুখে দিচ্ছিস না, নিজের মনে হাসছিস।
মামীর কথায় সম্বিত ফিরে পেল। খানিকটা লজ্জাও পেলো। নিজেকে সামলে নিয়ে বললো- না মামী কিছু না। এই তো খাচ্ছি। তুমি খাবে না মামী?
খেয়ে নে মা। আমি খালেকের মুখে কিছু দিয়ে আসি, তা না হলে ওই খাবার কেমন করে আমার গলার নিচে নামাবো। অমি যে মা।
প্লেটে কিছু ভাত নিয়ে বের হয়ে গেলেন খালেকের মা। মা ছাড়া আর কাউকে চিনতে পারে না খালেক। অন্য কেউ খাবার নিয়ে গেলে মুখে তোলে না। চিৎকার জুড়ে দেয় আর দূরে ছুড়ে মারে প্লেট।
-আয় আব্বা, একমুঠো ভাত খেয়ে নে। এমন করে না খেয়ে আর কয় দিন বাঁচবি!
-আবার তুমি ভাত এনেছো? আমার তো ভাতের খিদে লাগে না। আমার খাওয়া লাগবে না, একবার শুধু শিকলটা খুলে দাও মা। বিড়বিড় করে বলে খালেক। কণ্ঠস্বর যেন নীড়হারা ডাহুক সাবকের সন্ধ্যাবেলার আর্তনাদের চেয়ে করুণ।
কচুর লতি দিয়ে ভাত মাখিয়ে এক লোকমা জোর করে খালেকের মুখে গুঁজে দিয়ে আচলে চোখ মোছে মা।
সোনার টুকরো ছেলে আমার। যেমনি ছিলো লেখাপড়ায় তেমনি আচার ব্যবহারে। কেমন করে যে কি হয়ে গেল। কেশবপুর কলেজে আইএ পড়ার সময় প্রথম মাথায় সমস্যা দেখা দেয়। কিছু দিন ভাল থাকে আবার কিছু দিন উন্মাদ হয়ে যায়। হঠাৎ একদিন বাড়ি থেকে উধাও হয়ে গেল। টানা আড়াইমাস পর বাড়ি ফিরলো। কদিন যেতে না যেতে আবার অস্বাভাবিক হয়ে উঠলো। চিৎকার করে, মানুষের বাড়িতে ঢুকে যায় সময় অসময়ে। লাঠি নিয়ে তেড়ে যায় কারো উপর। বাধ্য হয়ে পায়ে শিকল দিতে হয়েছে।
অনেক সময় পর পর মায়ের হাত থেকে এক লোকমা ভাত মুখে নিয়ে একটু হাসে তারপর চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে কি যেন বলে। খুব ছোটবলা থেকেই সংসারে অস্বচ্ছলতা ভেতর থেকে উপলব্ধি করেছিলো খালেক। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ খুব অল্প বয়সেই তাড়া করেছিলো তাকে। মায়ের বেশ মনে পড়ে যে বছর খালেকের বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন সেই বছর থেকেই সে মনমরা হয়ে যায় বিড়বিড় করে একা একা কথা বলা শুরু করে। কেমন যেন সব কিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয় ছেলেটা।
আছিয়ার এই বাড়িতে আজই হয়তো শেষ আসা। দুনিয়াতে আপন বলতে তার কেউ নেই। জন্মের সময় মা মারা গেছে। ক্লাস এইটে পড়ার সময় ট্রাক চাপায় মারা গেছে ভ্যান চালক বাপ। চাচাদের সংসারে কেটেছে কিছু কাল এর পর বিয়ে হয়েছে রতনদিয়া গ্রামের এক অনাথ ছেলে শফিকের সাথে। অনেক চেষ্টা তদ্বির করে শফিক গত সপ্তায় ঢাকার একটি গার্মেন্ট কারখানায় নাইটগার্ডের কাজ যোগাড় করেছে। একই কারখানায় স্ত্রীর জন্য হেলপারের একটা চাকরির ব্যবস্থা হয়েছে। আজ রাতে আছিয়াকে নিয়ে সফিক ঢাকা চলে যাবে তাই এসেছে একবারের জন্য খালেককে দেখতে।
মা তখনো খালেককে খাওয়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আছিয়া এসে বারান্দার সামনে দাড়ালো।
-মামী দোয়া করো, চলে যাচ্ছি। কেমন যেন দীর্ঘশ্বাসেরসাথে বললো আছিয়া।
-চলে যাবি মা? আমার খালেকের জন্য আল্লার কাছে একটু দোয়া করিস। ভালো থাকিস মা।
খালেকের উদাস চোখের দিকে তাকিয়ে আছিয়া বললো -আসি ভাই।ভালো থাকো।
খালেক হয়তো কিছুই শোনেনি। নিশ্চল-নিশ্চুপ চেয়ে আছে দূরের পথের দিকে। আছিয়া ধীরে রাস্তার দিকে পা বাড়ালো। যেন নিজের শরীটা নিজের কাঁধে বয়ে নিয়ে চলেছে। পাথরের মত ভারী হয়ে ওঠা পা দু'টো কিছুটা সামনে এগুতেই খালেকের কন্ঠ।
‘ও দূরকে মুসাফির হাম কো ভি সাথ লে লে রে
হাম কো ভি সাথ লে লে হাম রহে গেয়ে একেলে...’
গানের সুর যেন হিমশীতল বাতাস হয়ে জমিয়ে দিলো আছিয়ার বুক। মুহূর্তে ফিরে তাকালো খালেকের দিকে। আকাশের দিকে তাকিয়ে গেয়ে চলেছে সে। শাড়ির আঁচলে চোখের পানি আড়াল করে আছিয়া আবার পা বাড়ালো সামনে। কানে বাজছে ‘হাম কো ভি সাথ লে লে হাম রহে গেয়ে একেলে...।’
শয়লাহাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে আসতেই বুকের তলে সজোরে আঘাত করতে শুরু করলো হাজারও পুরোনো দিন। এই স্কুল, এই মাঠ- এর পরতে পরতে কতো স্মৃতি। এই স্কুলের প্রথম বৃত্তি পাওয়া ছাত্র খালেক। এলাকার কতো মানুষ সেদিন ওকে প্রশংসা করতে এসেছিল। ও নাকি গর্বিত করেছিলো এই এলাকাকে। আজ তাদের অনেকেই হয়তো খালেকের খবর রাখে না। প্রাইমারী স্কুল ছাড়িয়ে পরের মাঠটা শয়লাহাট নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণ ঘোষ স্যারের অপার স্নেহ ছিলো খালেকের মাথার উপর।
অনেক কিছু এখনো খাপছাড়া মনে হয় তারপরও কেমন যেন এই নগর জীবনের সাথে নিজেকে অনেকখানি মানিয়ে নিয়েছে ধান ক্ষেতের আইলে ঘাস ফড়িংয়ের পেছনে ছুটে বেড়ানো আছিয়া। এইতো সেদিনের কথা গ্রামের বেগুন ক্ষেতে দেখতে পাওয়া একটি বুলবুলির পিছনে ছুটেছে সারা দিন। যার অগনতি প্রহর কেটেছে ফিঙ্গে আর দোয়েলের শীষ শুনে তার হৃদয় আজ বিবর্ণ বড় বড় গাড়ির হুইসেল আর কারখানার সাইরেনে। বাস্তুচ্যুৎ সম্বলহীন আছিয়া আর কখনোই ফিরে পাবে না তার পুরোনা দিনগুলো। ইট পাথরের শহরে হৃদয়হীন পয়সাওয়ালাদের মুনাফার যোগনদার একজন সস্তা শ্রমিক হয়ে টিকে থাকার চেষ্টা। আজকের থেকে কালকের কাজের চাপ আরো বেশি। হৃদয়ের বেসাতি এই শহরে কেউ করে না। ভালোলাগা মন্দলাগা সব এখানে বানিজ্যিক।
তিন বছর আগে একটি ব্যাগে দু’একটি জামা কাপড়, কাথা-বালিশ আর কয়েকটি স্টিলের প্লেট-গ্লাস নিয়ে বাসে চেপেএই শহরে আসা। হেমন্তের ঠান্ডা বাতাস পেছনে ফেলে ইঞ্জিনে শব্দতুলে এগিয়ে যায় বাস আর স্মৃতির ঢেউ পাঁড় ভেঙ্গে চলে আছিয়ার বুকে। একটু করে পথ পাড়ি দেয় আর বাতাসের গন্ধ যেন বদলে যেতে থাকে। গভীর দীর্ঘশ্বাসে বুক ভারী থেকে আরো ভারী হয়ে ওঠে। জীবনের শাশ্বত স্বপ্নকে পেছনে ফেলে শুধুমাত্র জীবন ধারণের জন্য ছুটে চলা। তারপর স্বামী-স্ত্রী মিলে সকাল থেকে রাত অবধি কারখানায় কাজ। কোন দিকে তাকানোর ফুরসুত নেই। বসবাস শাজাহানপুর ঝিলপাড়ের বস্তিতে। মাঝে একবার শুনেছিলো খালেক শিকল ছিড়ে পালিয়েছে। নিকটজনদের কেউ তার সন্ধানে খুব বেশী আগ্রহী হয়নি। শুধু মায়ের দিন বয়ে যায় চোখের পানি ফেলে। কারখানায় আসা যাওয়ার পথে আছিয়া ঠিকই মনে মনে খোঁজে তাকে। শফিককেও মাঝে মধ্যে বলে সময় পেলে খালেক ভাইয়ের খোঁজ করো। আজ অবারো বলেছে একবার। শফিক বলে পাগল মানুষ, কোথা থেকে কোথায় গেছে- খুঁজে কি পাওয়া যায়? বেঁচে আছে কি না তারও বা ঠিক কি?
শেষ কথাটা শেলের মতো বিঁধলো আছিয়ার কান থেকে বুকে কিন্তু বলতে পারলো না কিছুই। বুকের ভেতরটা কেমন ভারী হয়ে উঠলো। শরীরটাও ভাল যাচ্ছেনা কিছুদিন ধরে। পেটে বাচ্চা এসেছে সাতমাস হলো। মাতৃত্বকালীন ছুটি মিলছে না। ছুটি চাইলে ফ্লোর ইনচার্জ বলে চাকরি ছেড়ে দাও নয়তো বিনা বেতনে ছুটি নাও। এই অবস্থায় ওভারটাইমসহ ১২ ঘন্টা ডিউটি করে যারপরনাই ক্লান্ত হয়ে যায় আছিয়া। আজ একটু বেশি ক্লান্ত লাগছে। শফিকের নাইট ডিউটি। ফিরতে সেই ভোর ছয়টা। না খেয়েই বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয় আছিয়া। কিন্তু ঘুম আসছে না। কেমন যেন অস্থির লাগছে ভেতরটা। শেষরাতের দিকে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে সে। ঘুমের ঘোর আসতে না আসতেই কানে ভেসে আসে সেই সুর-
‘ও দূরকে মুসাফির হাম কো ভি সাথ লে লে রে
হাম কো ভি সাথ লে লে হাম রহে গেয়ে একেলে...’
ছুটে গিয়ে ঘরের জানালা খোলে আছিয়া। নিয়নের ঝাপসা আলোয় দেখতে পায় ছেড়া নেংটি পরে, অর্ধেকটা শিকল পায়ে নিয়ে টানতে টানতে ওভারব্রীজের নিচ দিয়ে খালেক এগিয়ে যাচ্ছে সামনের রেল লাইনের দিকে। শিকলে বাঁধা আছিয়ার স্বপ্ন গড়াগড়ি খাচ্ছে রাস্তার ধুলোয়। সে চিৎকার করে বলার চেষ্টা করছে- ভাই আমি আসছি, তুমি দাঁড়াও.. কিন্তু তার গলা দিয়ে স্বর বের হচ্ছেনা। কানের মধ্যে কেবলই জোরালো হচ্ছে খালেকের কন্ঠ-
.. শুনি হ্যায় দিল কি রহে খামোশ হ্যায় নিগাহে
নাকাম হাসরাতো ক্যা উঠনেকো হ্যায় জানাজা
চারো তরাফ লাগে হ্যায় বরবাদিও ক্যা মিলেরে
হাম কো ভি সাথ লে লে হাম রহে গেয়ে একেলে...
দানবের মতো হুঙ্কার দিয়ে ছেড়ে গেল একটি ট্রেন। ঘুম ভেঙে গেল আছিয়ার। লাফ দিয়ে উঠে বিছানায় বসে হাঁপাতে লাগলো সে। ঘামে ভিজে গেছে সারা শরীর। বুকের ভেতর বেদনার মতো বেঁজে উঠতে চাইছে হারানো দিন।
-মঈনুল হক

কবিতা


                                                                               






কুঁড়ে ঘর 
           
 নাসিদ 


একটা ভাঙা কুঁড়ে ঘরের স্বপ্ন ছিলো,
তাল পাতার ছাউনিতে ঢাকা ছিলো ,
রাতের আধারে মেঘের বুক চিরে,
জ্যোত্স্না উঁকি দিবে কথা ছিলো।
বর্ষার আকাশ কেঁদে কেঁদে আমাকে
স্লান করাবে , এমন ও স্বপ্ন ছিলো ।
কথা ছিলো জোনাকির সাথে ,
কথা ছিলো রাত জাগা পাখির সাথে।
কথা ছিলো হাসনাহেনা ও শিউলীর সাথে ।
কথা ছিলো কোটি কোটি তারার সাথে ।
কথা ছিলো আধারের সাথে ,
কথা ছিলো কুড়ে ঘরের স্বপ্ন দেখবো বলে ।
কথার গলে , বিষের মালা , আমি এক ছন্নছারা ।
সব কথা ছুরে ফেলে , নিজেকে নিজে করেছি বড় অবহেলা ।
আজ এই রাত সাক্ষী , আবার কোন এক শরত্ এ ঘুম হরনকারী-
চাঁদের আলোতে কথা দিবো ।
সত্যিই আমি কথা দিবো , একটা
ভাঙা কুঁড়ে ঘর তোকে দলিল করে দিবো ।
তালপাতার সে ছাউনি , টিপ টিপ
বৃষ্টির ফোঁটা , রাত জাগা কল্প কাহিনী ।
আঁধারের বুক চিরে , কদম-কেয়া, জুঁই বেলীর সৌরভ মাখা সেই রাত।
আমার আজম্ম পাপ, বৃষ্টির ছন্দে
তোর শীত্কার - ফুল হীন সে ঘর ।
অথচ বুনো ফুলের সৌরভ -
তোর আর আমার ফুলশর্য্যার সে রাত।
একটি মাত্র ভাঙা কুঁড়ে ঘরের দলিল
তোর হাতে আমার হাত ।
ভালোবাসায় কেটে যাবে সহস্র রাত।